ইসলামিক প্রশ্ন উত্তর রোজা

রমজানের রোজা: ইসলামের স্তম্ভ ও আত্মশুদ্ধির মাস

Written by Jahangir

রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি সময়। এই মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে মুসলিমরা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকে। রোজা রাখা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম এবং এর গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শুধু না খেয়ে থাকার নাম নয়, বরং এর রয়েছে গভীর আধ্যাত্মিক, শারীরিক ও সামাজিক তাৎপর্য।

রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত

রমজান মাসকে কোরআন নাজিলের মাস বলা হয়। এই মাসে আল্লাহ তাআলা রোজাকে ফরজ করেছেন, যাতে মুসলিমরা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করতে পারে। আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।” (সূরা বাকারা: ১৮৩)

  • গুনাহ মাফের মাধ্যম: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (সহিহ বুখারী ও মুসলিম)
  • শয়তানকে নিয়ন্ত্রণ: রমজান মাসে শয়তানকে শিকলবন্দী করা হয়, ফলে মানুষের জন্য ভালো কাজ করা সহজ হয় এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হয়।
  • শারীরিক উপকারিতা: রোজার মাধ্যমে শরীরের পরিপাকতন্ত্র বিশ্রাম পায়, যা শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে।

রোজা রাখার নিয়মাবলী

রোজা পালনের জন্য কিছু নিয়ম রয়েছে, যা মেনে চলা আবশ্যক:

১. নিয়ত: রোজা রাখার জন্য প্রথম শর্ত হলো নিয়ত করা। প্রতি রাতে সাহরির আগে মনে মনে এই ইচ্ছা পোষণ করতে হয় যে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখছি।

২. সাহরি: সুবহে সাদিকের আগে খাবার খাওয়াকে সাহরি বলে। রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহরি খাওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন এবং বলেছেন, “তোমরা সাহরি খাও, কারণ সাহরিতে বরকত রয়েছে।” (সহিহ বুখারী)

৩. ইফতার: সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা সুন্নত। খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার শুরু করা উত্তম। ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।

৪. রোজা ভঙ্গকারী বিষয়: ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করা, ধূমপান করা, যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা, বমি করা (যদি মুখ ভরে আসে), ইত্যাদি রোজা ভঙ্গকারী কাজ। এসব থেকে বিরত থাকা জরুরি।

রমজানে করণীয় ও বর্জনীয়

রমজানে শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকাই যথেষ্ট নয়। এই মাসে মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আরও বেশি ইবাদত করে থাকে।

  • কোরআন তেলাওয়াত: রমজান হলো কোরআন তেলাওয়াতের মাস। এই মাসে বেশি বেশি কোরআন পড়া ও বোঝার চেষ্টা করা উচিত।
  • তারাবিহ নামাজ: এশার নামাজের পর তারাবিহ নামাজ পড়া রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
  • দান-সদকা: এই মাসে গরিব-দুঃখীদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানো এবং দান-সদকা করা খুবই পুণ্যের কাজ।
  • অহেতুক কথা ও কাজ বর্জন: মিথ্যা কথা বলা, গীবত করা, ঝগড়া করা, এবং অন্যান্য পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা রোজার মূল উদ্দেশ্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও খারাপ কাজ পরিহার করল না, তার পানাহার ত্যাগ আল্লাহর কাছে কোনো গুরুত্ব রাখে না।” (সহিহ বুখারী)

রমজানের রোজা হলো আত্মশুদ্ধি, সংযম ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক অনন্য সুযোগ। এই মাস আমাদের শেখায় কীভাবে ধৈর্য, সহনশীলতা এবং সহমর্মিতা নিয়ে জীবনযাপন করতে হয়। তাই আসুন, এই পবিত্র মাসে ইবাদতে মশগুল হয়ে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের চেষ্টা করি।

About the author

Jahangir

নাম: আবু আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর। একজন ইসলামিক ব্লগার। আমি ”ইসলামের দাওয়াত” ব্লগে নিয়মিত কুরআন-হাদিসের আলোকে ব্লগ প্রকাশ করে যাচ্ছি।

Leave a Comment