ইসলামিক প্রশ্ন উত্তর ঈমান

নফসকে নিয়ন্ত্রণ: ইসলামের চোখে আত্ম-সংযম ও পরিশুদ্ধি

Written by Jahangir

ইসলামে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাকে ‘নফসকে নিয়ন্ত্রণ’ বলা হয়। নফস হলো মানুষের ভেতরের সেই প্রবৃত্তি, যা তাকে ভালো বা মন্দ কাজের দিকে ধাবিত করে। নফসকে নিয়ন্ত্রণ করা আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়। ইসলাম মানুষকে শেখায় কীভাবে এই নফসকে দমন করে এক উন্নত ও তাকওয়াবান জীবন যাপন করা যায়।

নফস কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

নফসকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:

১. নফসে আম্মারা: এটি হলো সেই প্রবৃত্তি, যা মানুষকে খারাপ কাজের দিকে বারবার উৎসাহিত করে। কোরআনে এর উল্লেখ আছে, “নিশ্চয়ই নফস মন্দ কাজের প্রতি নির্দেশ দেয়…” (সূরা ইউসুফ: ৫৩)। এটি হলো কুপ্রবৃত্তি, যা মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নেয়।

২. নফসে লাওয়ামাহ: এটি হলো সেই নফস, যা খারাপ কাজ করার পর নিজেকে ধিক্কার দেয় এবং অনুতপ্ত হয়। এটি ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে পারে এবং অনুশোচনা করে।

৩. নফসে মুতমাইন্নাহ: এটি হলো প্রশান্ত আত্মা। এটি আল্লাহর আদেশ মেনে চলে এবং তার ওপর সন্তুষ্ট থাকে। জান্নাতে প্রবেশকারীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন, “হে প্রশান্ত আত্মা! তোমার রবের কাছে ফিরে আসো সন্তুষ্টচিত্তে…” (সূরা আল-ফাজর: ২৭-২৮)।

নফসকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি, কারণ নফস আম্মারা মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, নফসে মুতমাইন্নাহ মানুষকে জান্নাতের দিকে পরিচালিত করে।

ইসলামে নফস নিয়ন্ত্রণের উপায়

ইসলাম নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু কার্যকর পথ বাতলে দিয়েছে:

১. আল্লাহর ভয় ও তাকওয়া অর্জন:

তাকওয়া মানে হলো আল্লাহর ভয়ে সকল পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং তার আদেশগুলো মেনে চলা। যখন কোনো মানুষ আল্লাহর শাস্তির কথা স্মরণ করে, তখন তার পক্ষে নিজেকে মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখা সহজ হয়। কোরআন ও হাদিসে বারবার তাকওয়া অর্জনের কথা বলা হয়েছে, কারণ এটিই হলো আত্ম-নিয়ন্ত্রণের মূল ভিত্তি।

২. ইবাদত ও জিকির:

নিয়মিত নামাজ, রোজা, কোরআন তেলাওয়াত এবং জিকির-আজকার নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখার শক্তিশালী মাধ্যম। বিশেষ করে, রমজানের রোজা হলো নফসকে নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ। রোজা শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম নয়, বরং মিথ্যা, গীবত ও অন্যান্য পাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখার শিক্ষা দেয়।

৩. মন্দ সঙ্গ ত্যাগ ও ভালো মানুষের সঙ্গ গ্রহণ:

আমাদের চারপাশের পরিবেশ আমাদের মন ও চরিত্রের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। খারাপ মানুষের সঙ্গ নফসকে খারাপ কাজের দিকে উৎসাহিত করে। তাই ভালো ও ধার্মিক মানুষের সঙ্গ নেওয়া জরুরি, কারণ তারা আমাদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের পথে সাহায্য করবে।

৪. হালাল রুজি ও পরিমিত জীবন:

হারাম উপায়ে উপার্জিত অর্থ নফসকে দূষিত করে। তাই হালাল উপায়ে রুজি রোজগার করা এবং লোভ-লালসা পরিহার করে পরিমিত জীবন যাপন করা নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

৫. অন্তরকে পরিশুদ্ধ রাখা:

হিংসা, অহংকার, লোভ এবং ঘৃণা হলো আত্মার ব্যাধি। এগুলো নফসকে মন্দ কাজে উসকানি দেয়। এই ব্যাধিগুলো থেকে মুক্ত থাকার জন্য নিয়মিত তওবা ও ইস্তেগফার করা, ক্ষমা করা এবং অন্যের প্রতি দয়া দেখানো প্রয়োজন।

ইসলামে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ একটি দীর্ঘ ও নিরন্তর সাধনার বিষয়। এটি একদিনে অর্জন করা যায় না। আল্লাহর সাহায্য ও নিজের দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে ধীরে ধীরে নফসকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। যখন একজন মুসলিম তার নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে, তখন সে শুধু নিজের জন্যই নয়, বরং সমাজ এবং সমগ্র মানবজাতির জন্যও এক উন্নত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।

About the author

Jahangir

নাম: আবু আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর। একজন ইসলামিক ব্লগার। আমি ”ইসলামের দাওয়াত” ব্লগে নিয়মিত কুরআন-হাদিসের আলোকে ব্লগ প্রকাশ করে যাচ্ছি।

Leave a Comment