কোরআন

কোরআন: মানবজাতির জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার

Written by Jahangir

কোরআন শুধুমাত্র একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, এটি মানবজাতির জন্য এক পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। আল্লাহ তাআলা এই কিতাবকে মানুষের হেদায়েতের জন্য এবং একই সাথে শারীরিক ও মানসিক রোগের প্রতিকার হিসেবে নাজিল করেছেন। কোরআনের এই দুটি দিক একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

হেদায়েত: অন্ধকার থেকে আলোর পথে

কোরআনের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোতে নিয়ে আসা। কোরআন মানুষের জন্য জীবন পরিচালনার একটি নির্ভুল গাইডলাইন হিসেবে কাজ করে।

  • সঠিক পথের দিশা: কোরআন আমাদের শেখায় কীভাবে একজন মানুষ আল্লাহর দাস হিসেবে জীবনযাপন করবে। এটি মানুষকে হালাল-হারামের পার্থক্য শেখায়, ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে জ্ঞান দেয় এবং সমাজ ও পরিবারের প্রতি মানুষের কী দায়িত্ব তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
  • আত্মিক পরিশুদ্ধি: কোরআন তেলাওয়াত, এর অর্থ অনুধাবন এবং সেই অনুযায়ী আমল করার মাধ্যমে মানুষের আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। এটি মন থেকে হিংসা, অহংকার, লোভ ও ঘৃণা দূর করে। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় এই কোরআন এমন পথ দেখায় যা সর্বাধিক সরল ও সঠিক।” (সূরা আল-ইসরা: ৯)
  • জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উৎস: কোরআন শুধু ধর্মীয় বিষয় নিয়েই আলোচনা করে না, বরং এটি বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন এবং সমাজবিজ্ঞানের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের ইঙ্গিতও দেয়। কোরআন অধ্যয়নের মাধ্যমে মানুষ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার গভীরতা উপলব্ধি করতে পারে।

রোগের প্রতিকার: শিফা বা আরোগ্য

কোরআনকে আল্লাহ ‘শিফা’ বা আরোগ্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই আরোগ্য শারীরিক ও আত্মিক উভয় প্রকার রোগের জন্য প্রযোজ্য।

  • মানসিক ও আত্মিক আরোগ্য: আজকের আধুনিক বিশ্বে মানসিক রোগ একটি বড় সমস্যা। কোরআন মানসিক প্রশান্তি ও আত্মিক সুস্থতার জন্য এক অসাধারণ ঔষধ। আল্লাহর জিকির এবং কোরআন তেলাওয়াত মানুষের মনকে শান্ত করে। আল্লাহ বলেন, “যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।” (সূরা আর-রাদ: ২৮) হতাশা, দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতার মতো মানসিক ব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য কোরআন এক কার্যকর উপায়।
  • শারীরিক আরোগ্য: কোরআনের কিছু আয়াত বা সূরা তেলাওয়াত করে ফুঁ দিলে তা রোগের উপশম ঘটাতে পারে বলে হাদিসে উল্লেখ আছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও অসুস্থ অবস্থায় কোরআনের কিছু আয়াত তেলাওয়াত করতেন এবং সাহাবীদেরকেও তা করার নির্দেশ দিতেন। সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী এবং সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাসকে রুকিয়া (ঝাড়-ফুঁক) হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি আল্লাহর ইচ্ছায় রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।

কোরআনের হেদায়েত ও শিফা—এই দুটি দিক একে অপরের পরিপূরক। যখন একজন মানুষ কোরআনের দেখানো পথে চলে এবং এর বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করে, তখন তার আত্মা ও মন শান্ত থাকে। আর যখন তার মন ও আত্মা সুস্থ থাকে, তখন তার শরীরও সুস্থ থাকে। তাই কোরআনকে জীবনের মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। এটি শুধু পরকালের সফলতার জন্যই নয়, বরং এই দুনিয়ার জীবনকে সুন্দর ও রোগমুক্ত করার জন্যও এক মহা নিয়ামত।

About the author

Jahangir

নাম: আবু আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর। একজন ইসলামিক ব্লগার। আমি ”ইসলামের দাওয়াত” ব্লগে নিয়মিত কুরআন-হাদিসের আলোকে ব্লগ প্রকাশ করে যাচ্ছি।

Leave a Comment