নামাজ হলো ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আল্লাহর সাথে একজন বান্দার সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম। নামাজ কবুল হওয়ার জন্য কিছু মৌলিক বিষয় বা ফরজ রয়েছে, যা পূরণ করা বাধ্যতামূলক। যদি এর কোনো একটিও বাদ পড়ে, তাহলে নামাজ বাতিল বলে গণ্য হয়।
আজ আমরা জানবো নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি, গুরুত্ব ও অপরিহার্য নিয়মাবলী ইত্যাদি। চলুন শুরু করা যাক।
নামাজের ফরজ কয়টি ও কী কী?
নামাজের ফরজ মোট ১৪টি, যা দুই ভাগে বিভক্ত:
- নামাজের বাইরে ৭টি ফরজ
- নামাজের ভেতরে ৭টি ফরজ
নামাজের বাইরের ৭টি ফরজ
এগুলো নামাজ শুরু করার আগে সম্পন্ন করতে হয়।
১. শরীর পবিত্র হওয়া (তাহারাত): নামাজ পড়ার আগে শরীরকে বড় ও ছোট উভয় প্রকার নাপাকি থেকে পবিত্র করতে হয়। এর জন্য প্রয়োজন হলে গোসল বা অজু করতে হয়।
২. কাপড় পবিত্র হওয়া: নামাজের জন্য পরিহিত কাপড় এবং জায়নামাজ পবিত্র হওয়া জরুরি। কাপড়ে কোনো নাপাকি (যেমন: পেশাব, রক্ত) থাকলে নামাজ হবে না।
৩. নামাজের স্থান পবিত্র হওয়া: যে স্থানে নামাজ পড়া হবে, সেই স্থানটি পবিত্র হতে হবে।
৪. সতর ঢাকা: পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং মহিলাদের জন্য মুখ, দুই হাতের কবজি ও দুই পায়ের পাতা ছাড়া সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরজ।
৫. কেবলামুখী হওয়া: নামাজের জন্য কেবলা বা কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়ানো আবশ্যক।
৬. নিয়ত করা: যে নামাজের জন্য দাঁড়ানো হয়েছে, তার অন্তরে দৃঢ় নিয়ত করা। মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা সুন্নত।
৭. সময়মতো নামাজ আদায় করা: প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজ তার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদায় করা ফরজ। কোনো ওয়াক্তের নামাজ তার সময় শেষ হওয়ার পর পড়লে তা কাজা হিসেবে গণ্য হবে।
নামাজের ভেতরের ৭টি ফরজ
এগুলো নামাজ শুরু হওয়ার পর থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত পালন করতে হয়।
১. তাকবীরে তাহরিমা: নামাজ শুরু করার জন্য ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বাঁধা। এর মাধ্যমে দুনিয়াবি সব কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়া বোঝায়।
২. কিয়াম: নামাজের মধ্যে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। অসুস্থতার কারণে সম্ভব না হলে বসে বা ইশারায় নামাজ আদায় করা যায়।
৩. ক্বিরাত: কোরআন শরীফের কোনো অংশ পাঠ করা। কমপক্ষে তিনটি আয়াত বা একটি বড় আয়াত পড়া ফরজ।
৪. রুকু: ক্বিরাত পড়ার পর পিঠ সোজা করে ঝুঁকে পড়া। রুকুর মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও সামনে বিনয় প্রকাশ করা হয়।
৫. সিজদা: প্রত্যেক রাকাতে দুটি সিজদা করা ফরজ। সিজদার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রকাশ ঘটে।
৬. আখেরি বৈঠক: নামাজের শেষ রাকাতে ‘আত্তাহিয়াতু’ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় বসা।
৭. খুরুজ বিসুন’ইহি (সালাম ফিরানো): নামাজের শেষ বৈঠক শেষে সালামের মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।
এই ১৪টি ফরজ সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমেই একজন মুসলমানের নামাজ পূর্ণতা পায় এবং তা আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার উপযুক্ত হয়। তাই প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তির জন্য এই ফরজগুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখা এবং তা সঠিকভাবে পালন করা অপরিহার্য।