কোরআন

কুরআন কখন ও কিভাবে নাজিল হয়েছিল?

Written by Jahangir

কুরআন, মুসলিমদের জন্য ঐশী গ্রন্থ, যা মানবজাতির জন্য পথনির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে। এই মহাগ্রন্থটি একবারে নাজিল হয়নি, বরং দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে এর অবতরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এর প্রতিটি অংশই সুনির্দিষ্ট সময়ে এবং বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষাপটে নাজিল হয়েছে।

নাজিলের সময়কাল

নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির পর থেকে তাঁর ওফাত পর্যন্ত এই ২৩ বছরের দীর্ঘ সময়কালে কুরআন নাজিল হয়েছে। এই সময়কালকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:

১. মক্কী জীবন (১৩ বছর): নবুয়তের প্রথম দিকে মক্কায় নাজিল হওয়া সূরাগুলো সাধারণত ছোট এবং তাতে তাওহিদ (একত্ববাদ), পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম এবং নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে ইসলাম প্রচারের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং মানুষের বিশ্বাসকে মজবুত করার জন্য এই আয়াতগুলো নাজিল হয়।

২. মাদানী জীবন (১০ বছর): হিজরতের পর মদিনায় নাজিল হওয়া সূরাগুলো সাধারণত বড়। এই সূরাগুলোতে ইসলামী আইন, সমাজব্যবস্থা, যুদ্ধ, জিহাদ, পারিবারিক ও অর্থনৈতিক বিধি-বিধানের মতো বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের জন্য এই বিধি-বিধানগুলো নাজিল হয়েছিল।

কিভাবে নাজিল হয়েছিল?

কুরআন নাজিলের প্রক্রিয়া ছিল একটি অনন্য এবং ঐশী পদ্ধতি। আল্লাহ তা’আলা তাঁর বাণী ফেরেশতা জিব্রাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে পৌঁছে দিতেন। এই প্রক্রিয়ার কয়েকটি ধরন ছিল:

জিব্রাঈল (আ.)-এর সরাসরি অবতরণ: এটি ছিল নাজিলের সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি। ফেরেশতা জিব্রাঈল (আ.) মানুষের রূপ ধারণ করে নবী (সা.)-এর কাছে আসতেন এবং আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিতেন। সাহাবীরা অনেক সময় তাঁকে দেখতে পেতেন।

ঘণ্টার শব্দের মতো আওয়াজ: কখনও কখনও নবী (সা.) এমন একটি আওয়াজ শুনতেন যা ঘণ্টার শব্দের মতো ঝনঝন করত এবং এরপর তাঁর ওপর আল্লাহর বাণী অবতীর্ণ হতো। এই পদ্ধতিটি তাঁর জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল এবং এতে তিনি প্রচণ্ড ভার অনুভব করতেন।

সরাসরি অন্তরে স্থাপন: কখনও কখনও জিব্রাঈল (আ.) সরাসরি নবীর অন্তরে সেই বাণী স্থাপন করতেন, এবং তিনি তা মুখস্ত করে নিতেন।

স্বপ্নের মাধ্যমে: মাঝে মাঝে আল্লাহ স্বপ্নের মাধ্যমে নবীর কাছে কিছু বার্তা পাঠাতেন, যা পরে বাস্তবায়িত হতো।

সংরক্ষণের পদ্ধতি

কুরআন নাজিলের সঙ্গে সঙ্গে এর সংরক্ষণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। যদিও তখনকার সময়ে মুদ্রণ ব্যবস্থা ছিল না, তবুও কুরআনকে সুরক্ষিত রাখার জন্য দুইটি প্রধান পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল:

স্মৃতিতে সংরক্ষণ: নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে যখনই কোনো আয়াত নাজিল হতো, তিনি তা মুখস্থ করে নিতেন। তাঁর সাহাবীরাও সাথে সাথে তা মুখস্থ করে ফেলতেন। হাজার হাজার সাহাবী ছিলেন, যারা কুরআনের হাফেজ বা মুখস্থকারী হিসেবে পরিচিত।

লেখার মাধ্যমে সংরক্ষণ: মুখস্থ করার পাশাপাশি নাজিল হওয়া আয়াতগুলো তখন সহজলভ্য লেখার উপকরণ যেমন চামড়া, গাছের পাতা, হাড়, বা পাথরের ওপর লিখে রাখা হতো। নবী (সা.)-এর নির্দেশে এই কাজগুলো সম্পন্ন করতেন তাঁর বিশেষ লেখক সাহাবীরা।

পরিশেষে বলা যায়, কুরআন নাজিলের এই প্রক্রিয়াটি ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। এটি শুধু একটি বই নয়, বরং জীবনযাপনের এক পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা, যা মানবজাতির কল্যাণের জন্য ধাপে ধাপে নাজিল হয়েছিল। এটি একই সাথে মুখস্থ এবং লিখিত আকারে সংরক্ষণ করার মাধ্যমে এর নির্ভুলতা নিশ্চিত করা হয়েছিল, যা আজও অপরিবর্তিত আছে।

About the author

Jahangir

নাম: আবু আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর। একজন ইসলামিক ব্লগার। আমি ”ইসলামের দাওয়াত” ব্লগে নিয়মিত কুরআন-হাদিসের আলোকে ব্লগ প্রকাশ করে যাচ্ছি।

Leave a Comment